header ads

বাংলা প্ৰবন্ধ l বই পোকা l মাসকুরা বেগম l ৫ম বছৰ- ৩য় সংখ্যা

 বই পোকা

                     



          বছর তিনেক আগের কথা। গুয়াহাটিতে এই  খানাপাড়া মাঠেই বসেছিল গ্রন্থমেলা। এই মেলায় এসেছিল চার বন্ধু - জাহিন, জনি, লিটন ও আবু। পড়াশোনার জন্য তারা চারজন গুয়াহাটিতে  পেইং গেস্ট হিসেবে থাকত। জাহিন ও জনি ছিল বিজ্ঞান শাখার ছাত্র, লিটন কলা শাখার আর আবু  ছিল বানিজ্য শাখার ছাত্র। 

         জাহিন ও লিটন বই কেনায় ব্যস্ত। জনি ও আবু ভিডিও শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত; একজন উপস্থাপক এবং আরেকজন ক্যামেরাম্যান । সুশ্রী চেহারার স্বাস্থ্যবান জনির ছিল মোহিত হওয়ার মত স্পষ্ট কন্ঠস্বর। আধুনিকতার ছাপ তার কথাবার্তা, পোশাক-আশাক, আচার -ব্যবহারে সর্বত্র। সুন্দর পরিপাটি করে যেকোনো বিষয় উপস্থাপনা করতে দক্ষ সে। নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল আছে তার। মিলিয়ন ছাড়িয়েছে তার সাবস্ক্রাইবার ও ভিউয়ারের সংখ্যা। ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকেও তার হাজার হাজার ফলোয়ার। কম সময়ের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ নাম-ডাক হয়েছে তার। 

      "হ্যালো বন্ধুরা, আমরা চার বন্ধু আজ এসেছি গ্রন্থমেলায়। আমি তোমাদের সব দেখাচ্ছি ঘুরে ঘুরে। এই দেখো আমার পড়ুয়া বন্ধু জাহিন। গ্রন্থমেলার সব বই যেন ও একাই কিনে নেবে। হুমড়ি খেয়ে পড়েছে বইয়ের স্তূপে। এই সায়েন্সের স্টুডেন্টের সঙ্গ নিয়েছে আরেক পড়ুয়া লিটন। হাঃ হাঃ হাঃ......। " জাহিন শুধু একটু মুচকি হাসে। 

       জনি রুমে ফিরে গ্রন্থমেলার সুন্দর সুন্দর ভিডিওগুলো এডিটিং করে আপলোড করে দেয়। জাহিন গ্রন্থমেলায় কেনা বইগুলো উল্টে-পাল্টে দেখে। ক্লাসের পড়ার সঙ্গে  ব্যালান্স রেখে কীভাবে পছন্দের বইগুলো পড়বে তাও পরিকল্পনা করে নেয়।

        সেদিন রাতে জনির মা জনিকে ফোন করে বললেন, "বাবা জনি, তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?'' 

         " মা, তুমি কোনো চিন্তা করো না। এখন টেকনোলজির যুগ মা। পড়াশোনা এখন ইজি হয়ে গেছে। শুধু স্মার্ট ওয়ার্ক জানতে হয়। অনলাইন কোচিং-এ আমার প্রায় সব চ্যাপ্টার বোঝা হয়ে গেছে। পরীক্ষার আগে ম্যারাথন ভিডিওগুলো দেখে রিভাইস করে নেব।'" জনি মাকে বলল আর মনে মনে হাসল জাহিনের চিন্তা ভাবনা নিয়ে।   "হার্ড ওয়ার্ক, হার্ড ওয়ার্ক! প্রাকটিস, প্রাকটিস!' করতে করতে জাহিন জীবনটা উপভোগই করতে পারল না। 

          মা ছেলের কথা শুনে আনন্দে, গর্বে বললেন, '' কী জানি বাবা! তোমাদের আজকালকার ছেলে-পুলেদের পড়াশোনার ধরন বুঝি না। আমরা তো ব্যাকডেটেড হয়ে গেছি। আচ্ছা বাবা, জাহিনের পড়াশোনা কেমন চলছে? দেখো বাবা সে যেন তোমাকে টপকাতে না পারে। যতই বন্ধু হও ভেতরে ভেতরে কম্পিটিশনটা রেখো।"

         " ওই পড়ুয়ার কথা আর বলোনা মা! সায়েন্সের স্টুডেন্ট হয়ে বস্তা ভর্তি সাহিত্য পুথি নিয়ে এসেছে গ্রন্থমেলা থেকে।'' 

         "এতই যদি সাহিত্যে ইন্টারেস্ট তাহলে সাইন্স স্ট্রিম-এ এডমিশন নিয়েছে কেন? থাকুক সে ওসব নিয়ে। তুমি হায়ার সেকেন্ডারিতে ভালো রেজাল্ট করে মেডিকেল এন্ট্রান্সে কোয়ালিফাই কোরো।'' 

         ''ওকে মা, বাই বাই, গুড নাইট।" 

        '' ভালো থেকো। গুড নাইট বাবা।" স্মার্ট কনফিডেন্ট ছেলের জন্য গর্বিত মা আনন্দ মিশ্রিত বুকভরা এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।  

        আজ বিশ্ব গ্রন্থ দিবস উপলক্ষে গুয়াহাটিতে সেই খানাপাড়া মাঠেই এক বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানের একজন আমন্ত্রিত অতিথি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিন। তার লেখা  'পঁচিশটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের পর্যালোচনা ' বইটি যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে দেশে-বিদেশে। এই বইটি লেখার জন্য সম্মানিত করার জন্য তাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে।

       মলিন মুখে সোফায় বসে টিভিতে জাহিনের সম্মাননা গ্রহণ করা দেখছেন জনির মা। বই পোকা ছিল বলেই জাহিন আজ কোথায় পৌঁছে গেছে আর জনি রয়ে গেল হায়ার সেকেন্ডারি ফেল এক ইউটিউবার হয়ে। 









মাসকুরা বেগম 
সহকারী শিক্ষয়িত্রী 
চাম্পুপারা উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় 
শিক্ষাখণ্ড - ছয়গাঁও

Post a Comment

2 Comments