উৎসব
পরদিন মিতালীদের পরিবার সকলে মিলে একটি গাড়ি করে তাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। তাদের গ্রামের বাড়ি মরিগাঁওতে। মিতালী ও মোহিত বেজায় খুশি । গ্রামে পৌঁছে তারা আইতা ও বাড়ির অন্যান্যদের সঙ্গে অনেক গল্প করলো। রাতে আইতা, মা ও বাড়ির অন্যান্য মেয়েরা পিঠা বানাতে বসলো। মিতালী ও মোহিত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পডলো। পরদিন খুব ভোরে স্নান করে মিতালী বাড়ির সকলের সঙ্গে সামনের ছোটো মাঠে গেল। মিতালী দেখলো মাঠের মাঝখানে বিশাল উঁচু করে খড় ও পাতা দিয়ে মেজি বানানো হয়েছে। গ্রামের ছোটো-বড়ো অনেকেই এসেছে। গাঁওবুড়া মেজিতে আগুন লাগালেন। চারিদিকে ঠাণ্ডা কুয়াশা, তার মধ্যে আগুনের তাপ মিতালীর দারুণ লাগলো। সে দেখলো বড়োরা সবাই প্রার্থনা করছে। মিতালী বাবার শেখানো মতো ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল যে সবাই যেন ভালো থাকে, মনের খারাপ চিন্তা দূর হয়ে যেন ভালো চিন্তা আসে। বাড়ি ফিরলে আইতা তাদের পিঠা খেতে দিলেন। বরা চাউলের পিঠা, তিল পিঠা, গিলা পিঠা, লাড়ু অনেক কিছু। আইতা বললেন, "ভোগালি বিহু তো ভোজ বিহু, নতুন ফসলের বিহু। তাই তোমরা আনন্দ করে পিঠা খাও।" দুই ভাই-বোন বাড়ির সবার সঙ্গে বসে পেট ভরে পিঠা খেলো। দুদিন ধরে মিতালী দেখলো তাদের বাড়িতে অনেক লোক আসছে। তারাও অনেকের বাড়িতে গেল। দুদিন পরে মিতালীর পরিবার গুয়াহাটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। গাড়িতে বাবা জিজ্ঞেস করলেন, "তোমাদের এবারের বিহু কেমন লাগলো?" মিতালী ও মোহিত বললো যে তাদের খুব ভালো লেগেছে। মিতালী বললো, "এবার থেকে আমরাও গুয়াহাটিতে মেজি বানাবো।" মিতালীর বাবা তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন-, "শহরের ব্যস্ত জীবনে নিজেদের কৃষ্টিকে আমরা ভুলে যাচ্ছি, হারিয়ে ফেলছি আন্তরিকতা। আমাদের উৎসব ও কৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আমাদের নব প্রজন্ম আমাদের থেকেই শিখবে।"
0 Comments