মাতৃভাষার গুরুত্ব
"নানান দেশের নানান
ভাষা
বিনে স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা।"
একটি দেশ ও জাতির উন্নতিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। কোনো জাতির সামাজিক,অর্থনৈতিক বা ঐতিহাসিক পটভূমিকা তার মাতৃভাষার মাধ্যমেই প্রতিফলিত হয়। কোনও জাতির সাংস্কৃতিক হৃদস্পন্দনকে আমরা তার মাতৃভাষার মাধ্যমে অনুধাবন করতে পারি। একটি শিশু তার মাতৃভাষায় প্রথম কথা বলতে শেখে। সে তার মনের ভাব মাতৃভাষায় প্রকাশ করতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তার আশা-আকাঙ্খার সঠিক বহিঃপ্রকাশ তার মাতৃভাষার মাধ্যমেই ঘটে।
আমাদের নতুন প্রজন্মের নিজের মাতৃভাষা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা অবশ্য কর্তব্য । তাহলেই সে নিজের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে ও তার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারবে।
এটা অবশ্যই মানতে হবে যে আজ সমস্ত পৃথিবী একটি 'গ্লোবাল ভিলেজ'। এই বিশ্বায়নের যুগে ইংরেজী ভাষা আন্তর্জাতিক স্তরে যোগাযোগের একটি সর্বজনস্বীকৃত ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই বর্তমান যুগে ইংরেজী ভাষার জ্ঞান থাকাও অত্যন্ত প্ৰয়োজন। ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যের হাত ধরেই এদেশে রেনেসাঁ বা নবজাগরণের সূত্রপাত হয়েছিল।এর ফলস্বরূপ এদেশে মনস্তাত্বিক, বৌদ্ধিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছিল। ইংরেজী সাহিত্যের সাথে পরিচিত হয়ে আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি।
ইতিহাসে দেখা গেছে যে বিভিন্ন উন্নত
দেশের অধিবাসীরা তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের
উচ্চশিখরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তাই ইংরেজী ভাষার পাশাপাশি নিজেদের মাতৃভাষারও
সম্যক জ্ঞান থাকা দরকার। কারণ তাহলেই আমরা নিজেদের সমাজ, সমাজে বসবাসকারী অন্য
মানুষদের সুখ-দুঃখের সাথে একাত্ম হতে পারব। মাতৃভাষা চর্চায় শিশুর আগ্রহ বাড়াতে
তার মাতা-পিতারও দায়িত্ব থাকে। তারা নিজেদের সন্তানকে মাতৃভাষায় লেখা সাহিত্যপাঠে
যথেষ্ট উৎসাহিত করা উচিত। তাহলেই তারা নিজেদের ভাষার উৎকর্ষ সম্বন্ধে অবহিত হবে।
দেশের বর্তমান শিক্ষানীতিতেও মাতৃভাষায় শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা
হয়েছে।
মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে - বিদেশে অনেক লড়াই হয়েছে,অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। অনেক শহীদের রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মাতৃভাষার গরিমা রক্ষার্থে এই বলিদানকে স্বীকৃতি দিতে ২১ফেব্রুয়ারি 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' পালিত হয়। মাতৃভাষা আমাদের মনের খোরাক। আমাদের আনন্দ, সুখ-দুঃখ প্রকাশের প্রয়োজনীয় মাধ্যম। তাই এর প্রচার ও প্রসারে আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা করা উচিত।একটি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে তার মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। মাতৃভাষার এই গুরুত্ব ও গরিমা স্মরণে রেখে পরিশেষে আমরা কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সঙ্গে একসুরে বলি-
"মাতৃসম মাতৃভাষা পুরালে তোমার আশা
তুমি তার সেবা কর সুখে।"
তন্দ্রা দে
সহকারী শিক্ষয়িত্ৰী
আমিনগাঁও বেঙ্গলি প্রাথমিক বিদ্যালয়
শিক্ষাখন্ড - কররা
অলংকৰণ :- তন্দ্রা দে
2 Comments
Khub valo hayeche.
ReplyDeleteসুন্দৰ লিখনি
ReplyDelete