header ads

শিক্ষার আলো | Bengali article by Sangita Mazumdar

শিক্ষার আলো

শিক্ষার আলো  Bengali article by Sangita Mazumdar

        গোপাল প্রশ্ন করে তার মাকে, "মা, আমাদের আলো কে দেয়?" মা বললেন, "কেন বাবা? সূর্য। দিনের বেলা সূর্য  ওঠে বলেই তো আমরা আলো পাই।" গোপাল বলল, "তাহলে যে দিদিমনি আমাদের বললেন যে শিক্ষার আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে। তাহলে আমাদের কে আলো দেয়?" কমলা ছেলেকে কোলে বসিয়ে আদর করে বললেন, "হ্যাঁ বাবা, দিদিমনি ঠিকই বলেছেন। শিক্ষা  আমাদের আলো দেয়। সেই আলো মনের চোখ দিয়ে দেখতে ও অনুভব করতে হয়। তুমি একদিন বুঝবে।" 
        বাবাকে  গোপালের মনে নেই। মা বলে তার বাবা নাকি তারার দেশে থাকে। মা ও ঠাকুমার ভালোবাসা ও আদরে গোপাল বাবার অভাব কখনও অনুভব করেনি। কমলা লোকের বাড়িতে কাজ করে। সে স্বপ্ন  দেখে গোপাল পড়াশোনা শিখে একদিন বড়ো মানুষ হবে। রাতে ফুটো টিনের মধ‍‍্য দিয়ে আকাশের তারা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে সে। সারাদিন লোকের বাড়িতে কাজ  করে সন্ধ্যায় সে নিয়মিত ছেলেকে পড়তে বসায়। অভাবের সংসারে তার নিজের লেখাপড়া হয়নি।  কিন্তু ছেলের ভবিষ্যতের জন্য সে প্রচন্ড পরিশ্রম করতে কষ্ট বোধ করে না। নিজে পড়তে না পারলেও খুব মন দিয়ে ছেলের পড়া শোনে। কিছুটা বুঝতে পারে,কিছুটা বোঝে না। এইভাবেই গোপাল বড়ো হতে হতে দশম শ্রেণিতে পৌঁছয় । পড়াশোনা করতে সে খুব ভালবাসে। তার অধ‍্যবস‍ায় ও শিক্ষকদের সহায়তায় মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে সে।
            যথাসময়ে ফলাফল প্রকাশের দিন আসে। কমলার কাজে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ওবাড়ির বৌদির নির্দেশ, বাড়িতে প্রচুর লোকজন আসবে, তার একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। বাসনের গায়ে মাখানো সাবানের ফেনার মধ্যে তার চোখের জল পড়ে।  মন বসছে না কাজে। খুব দ্রুতগতিতে কাজ সেরে সে বাড়ির দিকে ছোটে। বাড়ির সামনে কিছু লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। কমলাকে পাড়ার ছেলেরা বলল, "কাকিমাা, গোপাল খুব ভাল ফল করেছে।" বাড়িতে ঢুকতেই গোপাল মাকে প্রণাম করে বলে, "মা, রাজ‍্যে আমি অষ্টম হয়েছি। সব তোমার আশীর্বাদ। কাল সাংবাদিক আসবে।"  কমলা যেন ঘোরের মধ‍্যে আছে। কেঁদে ফেলে সে। তার এতদিনের কষ্ট, লড়াই আজ সার্থকতা পেল। দুহাত জোড় করে সে ঈশ্বরকে প্রণাম জানায়।  মাকে জড়িয়ে ধরে গোপাল বলে, "মা আমি তোমাকে পড়াশোনা শেখাব।" কমলা লজ্জা পেয়ে বলে, "এই বয়েসে?" গোপাল মাকে আশ্বস্ত করে বলল, "হ‍্যাঁ মা। তুমি শিখে পাড়ার মহিলাদের শেখাবে। শিক্ষার আলো চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই অনুভূতি যে কত সুন্দর, মানুষকে সেটা বোঝাতে হবে।" কমলার চোখদুটো চিকচিক করতে থাকে।

 

*****************************************


 সংগীতা মজুমদার
 সহকারী শিক্ষয়িত্ৰী                             
 বুল্লুট বামুনটারী প্রাথমিক বিদ‍্যালয়
 শিক্ষাখন্ড - হাজো     
            

 


অলংকৰণ :- মনবীনী দাস


Post a Comment

0 Comments