header ads

ড° উজ্জ্বল কুমার সাহার সাক্ষাৎকার | Interview with Dr Ujjwal Kumar Saha

 সাক্ষাৎকার



    ১১ মে' জাতীয় প্রযুক্তি দিবস। এই দিবসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে 'জ্ঞানম' এর পক্ষ থেকে আই. আই. টি  গুয়াহাটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ° উজ্জ্বল কুমার সাহার একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। আমাদের জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নগুলোর উনি খুব সুচিন্তিত উত্তর দিয়েছেন।

জ্ঞানম - আজকের পৃথিবী প্রযুক্তিনির্ভর। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহারিক জ্ঞান দরকার। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রযুক্তির উপযোগিতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে এবং তাদের আগ্রহ ও কৌতুহল বা়াতে একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার মূল্যবান মতামত কী? 

° উজ্জ্বল কুমার সাহা-আজকের দিনে অধিকাংশ তথ্য(Resources) ইন্টারনেটেই পাওয়া যায়। ছাত্র-ছাত্রীরা অন্য আবিষ্কারকদের তৈরি করা যন্ত্রপাতি বা উপকরণ ইন্টারনেটের মাধ্যমেই জানতে পারেএবং এগুলোর থেকে প্রেরণা পেয়ে তারা এর থেকে আলাদা এমনকি পরিমার্জিত সংষ্করণ ন্যূনতম খরচে বিকাশ করতে সক্ষম হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ তারা সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও অগ্রজ ছাত্রদের থেকেও গ্রহণ করতে পারে। পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় এই গবেষণাপত্র ও patent এর সাহায্য নিয়ে তারা আরও নতুনতর অনুসন্ধানের পথে এগিয়ে যেতে পারবে। 

জ্ঞানম-আপনার শিক্ষাপরিক্রমা অর্থাৎ আপনার বিদ্যালয় জীবন থেকে শুরু করে দেশের প্রথম সারির শিক্ষানুষ্ঠানে অধ্যাপনা পর্যন্ত এই যাত্রার কথা যদি কিছু বলেন।

° সাহা-আমার ব়ো হওয়া ও লেখাপড়া কার্বিআংলং জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে সেই সময়ে কোনো বিদ্যুুৎ সংযোগ ছিল না এবং সেখানে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশও ছিল না। পরবর্তীকালে আমি শিক্ষা গ্রহণ করেছি গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়, Birla Institute of Technology, Ranchi এবং IIT Bombay তে। IIT, Bombay থেকে Ph. D সম্পূর্ণ করার পর ১৯৯৬ সালে NERIST, ইটানগরে যোগদান করি। সেখানে ৪ বছর অধ্যাপনা করার পর ২০০০ সালে IIT গুয়াহাটিতে যোগদান করি। সামগ্রিকভাবে আমি ২৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে অধ্যাপনা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। আমার গবেষণার বিস্তৃত ক্ষেত্রগুলো হলো Aerospace Propulsion, Turbomachinery, Aerodynamics, Wind Energy এবং Internal Combustion Engine. বিভিন্ন প্রকল্পের উপদেষ্টা ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করা ছা়াও আমি এখন পর্যন্ত ১১ জন ছাত্রকে তাদের PhD র কাজে guide করেছি। আমার বেশীরভাগ ছাত্ররা আজ সুপ্ৰতিষ্ঠিত। 

জ্ঞানম - আমরা জানতে পেরেছি সম্প্রতি স্ট্যানফোর্  বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের হাতেগোনাা কযেকজন বিজ্ঞানীকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আপনি তাদের মধ্যে একজন। আপনার এই গৌরবে আমরা আনন্দিত। এই স্বীকৃতির ব্যপারে আমরা বিশদভাবেে জানতে চাই।

° সাহা - আমার অধীনে থাকা IIT গুয়াহাটির ছাত্রদের গবেষণাপত্রের জন্য্য এই স্বীকৃতি পেয়েছি। বিভিন্ন   গবেষণাক্ষেত্রে  গবেষণাপত্রগুলির অবদান এবং অন্য গবেষকদেরও তা কীভাবে প্রভাবিত করেছে তার উপর ভিত্তি করেই স্ট্যানফোর্ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই সম্মান।

জ্ঞানম - এই কোভি পরিস্থিতিতে আমরা প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত online শিক্ষাব্যবস্থা দেখছি। কিন্তু এই online  শিক্ষাব্যবস্থা কতটা ফলপ্রসূ বা তা কি প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার পরিপূরক হতে পারে? এই ব্যপারে  আপনার কী অভিমত।

° সাহা - কোভি-১৯ এর মত বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে  online শিক্ষাব্যবস্থা এক অস্থায়ী বা স্বল্পমেয়াদী প্রক্রিয়া হতে পারে কিন্তু তা কখনোই এক ভাালো বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা হতে পারে না। কোনও বিষয়ে গভীর জ্ঞানলাভের জন্য শিক্ষার্থী ও  শিক্ষকদের মধ্যে প্রত্যক্ষ শৈক্ষিক আদাান-প্ৰদন খুবই প্রয়োজন। কিন্তু online শিক্ষাব্যবস্থায় তা সম্ভব নয়। তাছা়া বিদ্যালয়ের অন্য নির্ধারিত কার্যক্রম থেকেও শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত থাকে যা কিনা তাদের সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জ্ঞানম - কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয় বললেই যেন ছাত্র-ছাত্রীদের মনে এক ভীতির সঞ্চার হয় ।এই ভয় দূর করে তাদের বিষয়গুলির প্রতি আগ্রহী করতে আপনি কী উপায় দিতে চান।

° সাহা - এটা নির্ভর করে একজন শিক্ষকের উপর, যিনি আকর্ষণীয় উপায়ে বিষয়গুলির প্রতি ছাত্রদের কৌতুহল তৈরি করতে পারেন। এছা়াও তিনি দৈনন্দিন জীবনে গণিত ও বিজ্ঞানের প্রয়োগের উদাহরণও তুলে ধরতে পারেন। বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক ভিিও আছে যেগুলো শিক্ষার্থীদের বিষয়টির প্রতি আগ্রহ বা়াতে সাহায্য করতে পারে। গণিতের ক্ষেত্রে আমি বলব যে নিয়মিত অনুশীলনের অভ্যাস তাদের এই বিষয়টির প্রতি ভীতি অনেকাংশে দূর করতে সাহায্য করবে। তাছাড়াও শিক্ষার্থীদের তাদের লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি করাও খুব প্রয়োজন বিশেষ করে যারা উচ্চশিক্ষার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে।

জ্ঞানম - 'দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে প্রযুক্তির অবদান' - এই বিষয়ে আপনার কী মত।

° সাহা - বর্তমানের এই দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রযুক্তিই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির মূল চালক। প্রযুক্তিগত উন্নতি সুষ্ঠু উৎপাদনে সাহায্য করে এবং এর ফলস্বরূপে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায় ও একই সঙ্গে দারিদ্রের স্তরও হ্রাস পায়। সত্যি বলতে গেলে প্রযুক্তিগত উন্নতি ও অর্থনৈতিক বিকাশ একই সূত্রে গাঁথা।

জ্ঞানম - আজকের নবীন ছাত্র আগামীতে দেশ গড়ার কারিগর। একটি শিল্প গ়ে তুলতে ইঞ্জিনিয়ারিং এর সব শাখার প্রয়োজন হয়। যেমন পরিকাঠামােতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, যন্ত্র তৈরিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, শক্তির জন্য ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি...। এই বিষয়ে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপ্রেরণা দিতে আপনি কিছু বলুন ।

° সাহা - প্রথমত একজন শিক্ষার্থীর তার আগ্রহ অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়াারিং এর শাখা নির্বাচন করা উচিত। যদি তাদের অন্য শাখাতেও ভর্তি হতে হয় তাহলেও আমি মনে করি তাদের চিন্তার কারণ নেই। কারণ তাহলেও তারা নতুন বিষয়ের উপর নিজেদের আগ্রহ তৈরি করে নিতে পারবে এবং এটা সম্ভব। এমন অনেক উদাহরণ আছে যেখানে কোনো একটি প্রকল্পে ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন শাখা একই  সাথে কাজ করে। যেকোনো বিষয়ই হোক না কেন একজন ছাত্রের তার প্রতি মনোযোগী ও  আগ্রহী হতে হবে। এ পৃথিবীতে কোনোো কিছুই সহজলভ্য নয়। তাদের পরিশ্রমী হতে হবে এবং অবশ্যই নিয়মানুবৰ্তিতা মেনে চলতে হবে। এছা়াও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক কাজ-কর্মেও জ়িত হওয়়া উচিত যা তাদের সর্বাঙ্গীন বিকাশে সাহায্য করবে। পরিশেষে এটাই বলতে পারি যে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উচিত একজন সুনাগরিক হয়ে দেশের সেবা করা।

জ্ঞানম - আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এত ব্যস্ততার মধ্যেও এই সাক্ষাৎকারের সময় দেওয়ার জন্য। আমরা নিশ্চিত এই সাক্ষাৎকাারে ' জ্ঞানম' এর পাঠক-পাঠিকারা যথেষ্ট উপকৃত হবেন। 

° সাহা - ধন্যবাদ। 'জ্ঞানম' এর প্রতিও রইলো আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। 
----------------------------------------------------------------

সাক্ষাৎকার - - ° উজ্জ্বল কুমার সাহা
                        অধ্যাপক
                        মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
                         আই.আই.টি, গুয়াহাটি 

সাক্ষাৎকার গ্রহণ - - 


তন্দ্রা দে  
সদস্যা
শৈক্ষিক গোট জ্ঞানম, কামরূপ






অলংকৰণ :-  সুৰভি দাস




Post a Comment

0 Comments