header ads

করোনা মহামারী ও তার সাম্প্রতিক অনুভব |



        'এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার' গানটি শুনিয়েছিলেন আধুনিক বাংলা গানের বিখ্যাত এক কিংবদন্তি  শিল্পী জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। এক অজানা অচেনা অন্ধকার গর্ভে আমাদের প্রতিনিয়ত তলিয়ে যাওয়ার যে সাম্প্রতিক ইতিহাস- এ তো কোনো সাধারণ রাত নয়, এক সীমাহীন ঝড়ের রাতের ইঙ্গিতই বহন করে চলেছে। কয়েক শতাব্দী ধরে মানব সভ্যতার বিকাশে কী বিজ্ঞানে, কী অর্থনীতিতে, কী সমাজনীতিতে  কিংবা প্রযুক্তিবিদ্যায়, যুগ যুগ ধরে মানবজাতির যা কিছু অহংকার ,যা কিছু আস্ফালন - করোনা মহামারীর ভয়াবহতার কাছে আজ সবকিছুই বড়ো ম্লান, বড়ো অসহায়। হ্যাঁ, মহামারী পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো নতুন কথা নয়। গত দু-তিন শতাব্দীতেও মহামারী এসেছে, প্রাণ কেড়েছে সীমাহীন। কিন্তু সান্ত্বনা এটুকুই যে তখনও আমাদের বিজ্ঞান চর্চা, আমাদের গবেষণা, আবিষ্কার এতটাও অগ্রগতি লাভ করেনি। 

             আমার প্রায়ই সমাজবিজ্ঞানে পড়া গণতন্ত্রের একটি সংজ্ঞার কথা মনে পড়ে 'বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, অফ দ্য পিপল' । সেই গণতন্ত্রেরই চূড়ান্ত রূপ যেন এই কোভিড-১৯। ঠিক যেন মানুষের তৈরি, মানুষের জন্য, মানুষের বিষ। কেমন কাটছে আমাদের দুঃসময় ? সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষ যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, পৃথিবীর ইতিহাসে তার কতটুকুই বা লেখা থাকবে । চারিদিকে প্রিয়জনের মৃত্যুর ধারাবাহিকতা আর নিশ্বাস নিতে না পারার যে হাহাকার - এর শেষ কোথায়, তা আমরা কেউ জানিনা। প্রবল এই ঝড়ের শেষে কবে আবার মুখোমুখি বসার সুযোগ আসবে তাও জানিনা। এই বদ্ধ জীবন, এই বাহুল্যবর্জিত জীবনচর্চা, এই অজ্ঞাতবাস, আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের কতটা ক্ষতি করছে জানিনা, কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষভাবে বাচ্চাদের ভুবনটা একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। এ পৃথিবীকে তারা চেনেনা। প্রতিমুহূর্তে এক অজানা আতঙ্কের যে আগ্রাসন আমাদের গ্রাস করছে - নবীন প্রজন্মকে তার থেকে দূরে রাখতে আমরা পারছি কই? ক্রমশ ভাইরাসের বীজ বপন হচ্ছে দেহ থেকে দেহে। না, শুধু দেহে নয়। মনেও ছড়াচ্ছে মারণ ভাইরাস। দুঃসময়ে একে অন্যের পাশে থাকার যে প্রতিশ্রুতির স্বপ্ন আমরা হৃদয়ে লালন করি, কোথাও যেন তা মুখ থুবড়ে পড়েছে- 'সামাজিক দূরত্ব' এই একটি মাত্র স্লোগানের কাছে। আমরা ক্রমশ স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক এবং বিশ্বাসঘাতক জাতিতে পরিণত হচ্ছি। কিন্তু তবুও এই আকালেও মানুষ স্বপ্ন দেখে। আশার প্রদীপ জ্বালায়। ভালোবাসার বীজ বপন করে। যারা এই অকাল-বৈশাখীর দিনেও শ্মশানে দাহ করার দায়িত্ব নিয়েছেন, বাড়ি-বাড়ি রোগীদের ঘরের তৈরি খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, নিজের গাড়ি দিয়ে রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন, ঘরে ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করছেন, তাদের আমার লাল সেলাম। তারা আছেন বলেই পৃথিবী আজও অক্সিজেন শূন্য হয়ে যায়নি, তারা আছেন বলেই 'সকলের তরে সকলে আমরা /প্রত্যেকে আমরা পরের তরে' কবির এই বাণী আজও ধ্বনিত হয় প্রতিটি হৃদয়ে।

***********************

ড° মধুমিতা সেনগুপ্ত

সহকারী অধ্যাপিকা

বাংলা বিভাগ

আর্য বিদ্যাপীঠ মহাবিদ্যালয়




অলংকৰণ- তন্দ্ৰা দে


Post a Comment

0 Comments