header ads

বাংলা প্ৰবন্ধ l স্বামী বিবেকানন্দের যুবসমাজ - যুবসমাজের বিবেকানন্দ - সুশান্ত সরকার ৫ম বছৰ- ২য় সংখ্যা

 স্বামী বিবেকানন্দের যুবসমাজ

                     যুবসমাজের বিবেকানন্দ


                   স্বামী বিবেকানন্দ রওনা হয়েছেন চিকাগো। পথে ইয়াকোহামা থেকে তাঁর মাদ্রাজী বন্ধুগণকে লিখছেন "ভারতমাতা অন্তত সহস্র যুবক বলি চান। মনে রেখো মানুষ চাই, পশু নয়।.... সমাজের (এই) নূতন অবস্থা আনবার জন্য সর্বান্তঃকরণে প্রাণপণ যত্ন করবে, মাদ্রাজ এমন কতকগুলি যুবক দিতে প্রস্তুত?" দেখা যাচ্ছে স্বামীজি বিশ্ববিখ্যাত হওয়ার আগেই তাঁর পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য দেশের যুবশক্তিকেই বেছে নিয়েছিলেন। সে যুবক শুধু বয়সেই যুবক নয় কায়মনোবাক্যেও যুবক - উদ্দীপ্ত, অকুতোভয় সিংহসাহসী, প্রাণচঞ্চল, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, স্বাভিমানী। যাদের "লৌহের মতো পেশী ও বজ্রদৃঢ় স্নায়ু", "আশিষ্ঠো, দ্রঢ়িষ্ঠ, বলিষ্ঠ ও মেধাবী" যুবক। স্বামীজি যুবকদের আহ্বান করেছেন "তোমাদের ভবিষ্যত জীবনের পথ নির্ধারণ করিবার এই সময় - যতদিন যৌবনের তেজ রহিয়াছে, যতদিন না তোমরা কর্মশ্রান্ত হইতেছ, যতদিন তোমাদের ভিতর যৌবনের নবীনতা ও সতেজ ভাব রহিয়াছে ; কাজে লাগো - এই তো সময়।" দেশের তরুণদের অপরিমেয় শক্তির ওপর স্বামীজির ছিল অগাধ বিশ্বাস। মাদ্রাজের একটি ভাষণে তিনি বলেছেন "বীর্যবান, সম্পূর্ণ অকপট, তেজস্বী, বিশ্বাসী যুবক আবশ্যক। এইরূপ একশত যুবক হইলে সমগ্র জগতের ভাবস্রোত ফিরাইয়া দেওয়া যায়।" একই সুর প্রতিধ্বনিত হয়েছে কলকাতার ভাষণে - "হে কলকাতাবাসী যুবকগণ! হৃদয়ে এই উৎসাহের আগুন জ্বালিয়া জাগরিত হও।.... আমার দেশের ওপর আমি বিশ্বাস রাখি, বিশেষত আমার দেশের যুবক দলের ওপর।"

                  পাশ্চাত্য থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর কলম্বো থেকে আলমোড়া, নানা জায়গায় স্বামীজিকে অভিনন্দিত করা হয়েছিল। সেইসব অভিনন্দনের উত্তরে প্রদত্ত ভাষণ, অন্যান্য ভাষণ, লেখন, চিঠিপত্র, আলোচনা, কথোপকথন সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায় স্বামীজি যুবশক্তির জয়গান করেছেন, তাদের আহ্বান করেছেন দেশ গড়ার কাজে আত্মোৎসর্গ করতে।

                   বিদেশ থেকে কলম্বো, মাদ্রাজ হয়ে জাহাজে খিদিরপুর পৌঁছলেন। সেখান থেকে ট্রেনে শিয়ালদা। "প্রায় বিশ সহস্র লোক.... স্বামীজিকে সংবর্ধনা করেন। যুবকগণ স্বামীজির গাড়ির ঘোড়া খুলিয়া দিয়া নিজেরাই টানিয়া লইয়া যায়।" যুবকদের মধ্যে অনুরূপ প্রাণমাতানো উৎসাহ প্রায় সর্বত্রই দেখা গেছে। স্বামীজির দর্শনমাত্র তাদের প্রভাবিত করেছে।

                  স্বামীজির সান্নিধ্যে এসে হেমচন্দ্ৰ ঘোষ জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেলেন। রূপান্তরিত হলেন মহান বিপ্লবীতে। মাদ্রাজের আলাসিঙ্গা পেরুমল, যিনি সন্ন্যাসী না হয়েও স্বামীজির 'সমরনীতি' রূপায়ণে একজন নির্ভরযোগ্য সৈনিক ছিলেন। হাথরাস রেলস্টেশনের কর্মচারী শরৎচন্দ্র গুপ্ত দুদিনের সাহচর্যেই রূপান্তরিত হয়ে গেলেন স্বামী সদানন্দতে। পরবর্তীকালে সুভাষচন্দ্র বসু বিবেকানন্দ - সাহিত্য পড়ে খুঁজে পেলেন তাঁর জীবনের লক্ষ্য, পথ ও পাথেয়।এভাবে একজন দুজন নয়, অগুনতি যুবক নানাভাবে স্বামীজির আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল। স্বামীজি হয়ে পড়েছিলেন নবজাগরণের প্রেরণাপুরুষ।

                  স্বামীজির মধ্যে কী ছিল? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া ভার। তাঁর গুরু রামকৃষ্ণ বলতেন 'নরেন সপ্তঋষির এক ঋষি'। রোম্যাঁ রোলাঁ বলেছেন "স্বামী বিবেকানন্দ অদ্বিতীয়"। স্বামীজি নিজে বলেছেন "আমি কী করেছি আরেকটা বিবেকানন্দ এলে বুঝতে পারতো"। অন্যত্র বলেছেন "যা দিয়ে গেলাম দেড় হাজার বছরের খোরাক" । স্বামী বিবেকানন্দের মূল্যায়ন করে সাধ্য কার? আজও তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে চলছে দেশে বিদেশে নানা গবেষণা, উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য। এমতাবস্থায় ভারতবর্ষের যুবসমাজের 'আইকন' স্বামীজি ছাড়া আর কেই বা হতে পারতেন? স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনটি ১৯৮৫ সন থেকে 'রাষ্ট্রীয় যুব দিবস' হিসাবে পালন করে দেশের শক্তিস্বরূপ যুবকদের প্রেরিত করাই এর উদ্দেশ্য। দেশের যুবসমাজ জাগছে স্বামীজির স্বপ্নের ভারত গড়ে তোলার জন্য।


তথ্যসূত্র :-স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম ভাগ।




সুশান্ত সরকার

গুয়াহাটি

-----------------------------------------------------

লেখক পরিচিতি -- শ্রী সুশান্ত সরকার বিদ্যলয়ের শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে সুদীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর বিভিন্ন ব্যাঙ্কে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব নির্বাহ করে ২০১৭ সনে অবসর গ্রহণের পর লেখালেখিকেই সাথী করেছেন । ইতিমধ্যে কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ।

Post a Comment

0 Comments